বিজ্ঞানের বিস্ময়: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং বর্তমানে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। এ যেন মানব সভ্যতায় এক অজানা ভবিষ্যতের দুয়ার খুলে দিয়েছে। যা আমাদের দৈনন্দন জীবন থেকে শুরু করে জীবিকা, উৎপাদন পরিবহন, শিক্ষা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে এক অতুলনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসছে এবং আরো আনতে চলেছে।
তবে কি এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং? কোথা থেকে তাদের উৎপত্তি? কিভাবে তারা খুব শীঘ্রই পুরো দুনিয়ার রূপরেখা বদলে দিতে চলেছে? আর কি কিই বা অসাধ্য তারা আজ অব্দি সাধন করেছে? সর্বপরি তাদের ভালো এবং মন্দ দিক গুলো কি কি? এই সব কিছুর উত্তর নিয়েই আজকের আমাদের এই বিশেষ পর্বের আয়োজন। তবে আর দেরি কেন? চলুন শুরু করা যাক!
ধরুন আপনি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন একটি রোবট আপনার বিছানার কাছে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর যখন আপনি চায়ে চুমুক দিচ্ছেন তখন আপনাকে আজকের সংবাদপত্র থেকে তাজা হেডলাইন গুলো পড়ে শোনাচ্ছে।
কিংবা আপনার শিশুকে কোলে নিয়ে তার সাথে খেলা করছে। অথবা আপনার জন্য বাজারে গিয়ে তরি-তরকারি, শাক-সবজি, অথবা মাছ-মাংস কিনে নিয়ে আসছে। তাহলে কি মজাটাই না হতো তাই না?
এখন আপনি ভাবতেই পারেন, এগুলো কি সত্যি-সত্যিই ঘটতে পারে? যদি ঘটেও তবে তা কিভাবে সম্ভব? বা কবে সম্ভব? আদৌ কি কোন অদম্য শক্তি একটি প্রাণহীন কম্পিউটার বা রোবট এর মধ্যে মানুষের মতো আচরণ করার ক্ষমতা এনে দিতে পারবে?
তাহলে আপনাকে আজ একটি টপ সিক্রেট বলি: ‘হ্যাঁ’ পারবে। খুব শীঘ্রই না হলেও অদূর ভবিষ্যতে এটি ঘটতে চলেছে । কিভাবে বলছি?
কারন, এই অসাধ্য সাধন করার জন্য কিছু ক্ষ্যাপাটে বিজ্ঞানীরা তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। যার একটি বিস্ময়কর ফলাফল: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং।
আপনার কি টার্মিনেটর মুভির কথা মনে পড়ে? কিংবা সেই ছোট্ট কিউট ওয়াল-ই রোবটের কথা? যদি মনে এসে থাকে তাহলে ভাবুন তো, তারা মানুষ না হয়েও ঠিক কিভাবে মানুষের মতো আচরণ করছিলো?
যেমন টার্মিনেটর রোবট হওয়া সত্ত্বেও একটি ছোট্ট শিশুকে বাঁচানোর জন্য ভবিষ্যৎ থেকে চলে আসে। আবার ওয়াল-ই নিজেই একটি রোবট হয়েও আরেকটি রোবট ইভ এর প্রেমে পড়ে যায় এবং শেষমেষ জীবন পর্যন্ত দিতে রাজি হয়?
তারা এই কাজগুলো করতে পেরেছিল কারণ তাদেরকে সেভাবেই প্রোগ্রাম করা হয়েছিল। অর্থাৎ তাদের মধ্যে একটি নলেজ বা কমান্ড ইনপুট করে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যার মাধ্যমে তাদের ওপর যে নির্দেশনা ছিল সে মোতাবেক তারা তাদের লক্ষ্য সম্পাদন করেছিলো। এখন প্রশ্ন হলো কি সেই জ্ঞান? তাইতো?
সেই জ্ঞানটি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যা সহজ কথায় একটি কম্পিউটার বা রোবটের মগজ। আমরা যদি একে একটু বিজ্ঞানের ভাষায় বলি তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো মেশিনের মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতা প্রদর্শনীকে বোঝায়।
যেমন ধরুন যদি একটি মেশিন যার মানুষের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া বা সমস্যা সমাধনর করার ক্ষমতা আছে। অথবা পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সে শিক্ষা নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা রাখে? তবে সেটিই হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি কম্পিউটার বা রোবট।
অথবা চিন্তা করে দেখুন তো আপনি আপানার ফোনের ফেইস রিকগনাইজেশন এর মাধ্যমে যখন ফোনটি আনলক করলেন কিংবা যখন আপনি আপনার ফোনে ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট এর মাধ্যমে ফোনের অভ্যন্তরীণ কোন অ্যাপস চালু বা বন্ধ করতে বললেন। অথবা কল করতে হুকুম দিলেন তখন সে ঠিকঠাক সেই কথাটা শুনে আপনার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করলো।
এখন ভাবুনতো আপনার ফোন কিভাবে এই কাজ গুলো করলো? মনে প্রশ্ন জাগে? তাহলে জেনে রাখুন এই গুলো সম্ভব হয়েছে আপনার ফোনে থাকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এইভাবেই প্রতিনিয়ত আমাদের চারিদিকে মাকড়সা জালের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা জীবনের প্রতিটি শাখায় প্রশাখায় মিশে যাচ্ছে। যেমন ধরুন Chat-GPT, Gemini অথাবা এদের মতো আরোও অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার আমাদের জীবনে এখন একটি নিয়মিত বিষয়।
কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই কাজগুলো কিভাবে করছে। তাইনা? আর এই প্রশ্ন আসলেই দুটি শব্দের কথা মাথায় আসে। কি সেই শব্দ দুটি?
শব্দ দুটি হলো মেশিন লার্নিং। হ্যাঁ! মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাধারণত এই কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে।
মেশিন লার্নিং হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমন একটি শাখা যা মূলত কোন মেশিনকে তার অভিজ্ঞতা অর্থাৎ স্টোর্ড ডেটা থেকে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে তাকে পদে পদে উন্নত করে।
মেশিন লার্নিং একধরনের আ্যলগারিদম ডেটা ব্যবহার করে। যা কোন মেশিনকে স্পষ্টভাবে প্রোগ্রাম না করেই ডেটা বিশ্লেষণ করে পূর্ববর্তী ডেটা থেকে নিদর্শন নিয়ে তাকে কিছু শেখার বা কোন ধারণা বের করার ক্ষমতা দেয়।
যেমন, ইমেইল এর স্প্যাম ফিল্টারিং করার বিষয়টি যদি আমরা চিন্তা করি? ভেবে দেখুন তো কিভাবে AI একটি স্প্যাম মেইল শনাক্ত করে? মূলত AI কে মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমে শেখানো হয় যে, সে ঠিক কিভাবে একটি স্প্যাম এবং বৈধ ইমেইলের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করতে হয়।
এইরকম আরেকটি উদাহরণ এর কথা যদি আমরা চিন্তা করি তবে গুগল এ ইমেজ সার্চ এর কথাই ধরতে পারি। আপনি যখন গুগলে গিয়ে যখন আপানার প্রিয় কোন কিছুর নাম বা ডিটেইলস খুজে বের করার জন্য সেটির ছবি আপলোড দিয়ে ইমেজ সার্চ করেন, তখন গুগল তার কৃত্রিম বুদ্ধিমতাকে কাজে লাগিয়ে লক্ষাধিক ছবি থেকে আপনার আশানরুপ তথ্যটি খুজে এনে আপনার স্ক্রিনের সামনে এনে দেয়, এই প্রক্রিয়াকেই এক ধরনের মেশিন লার্নিং বলে।
কিন্তু একটি বিষয়ে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং বিষয়টি শুনতে খুব কাছাকাছি লাগলেও তাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কি ধরনের পার্থক্য? চলুন দেখে নেই:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মূলত কোন কম্পিউটার বা রোবটকে মানুষের মত করে চিন্তা করা, কোন কিছু শেখা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দান করে। অন্য দিকে মেশিন লার্নিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি শাখা যা একটি কম্পিউটার বা রোবটের অতীতের ডেটা ব্যবহার করে ভবিষ্যতের ঘটনার পূর্বাভাস দেয়।
কখনো আবার ডেটা পয়েন্টগুলিকে মেশিন লার্নিং প্রসেস বিভিন্ন বিভাগে বিন্যাস্ত করে। এবং ডেটার মধ্যে যদি কোন অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক প্যাটার্ন খুঁজে পায় তাহলে তা শনাক্ত করে।
সুতরাং এক কথায় যদি আমরা বলতে চাই তাহলে বলাই যায় যে, মেশিন কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের মত করে কাজ করতে সুযোগ করে দেয়। এবং মেশিন লার্নিং মেশিনকে ডেটা থেকে আইডিয়া নিয়ে নতুন কোন কাজ করা এবং আরো ডেভলপড হতে সহায়তা করে।
এইতো গেলো পার্থক্য। এবার চলুন চট করে দেখে নেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং এর ইতিহাস সম্পর্কে জানা- অজানা এবং মজার কিছু তথ্য:
আচ্ছা ভাবুন তো এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা মেশিন লার্নিং হঠাৎ করেই কি উড়ে এসে জুড়ে বসেছে আমাদের মধ্যে? নাকি এটি একটি অতি প্রাচীন কোন আইডিয়া যা যুগের পর যুগ ধরে অধীর চেষ্টায় বাস্তবে রূপ নিচ্ছে?
উত্তর হলো ‘না।’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং হঠাৎ করেই আমাদের জীবনে হঠাৎ করেই আমাদের কাছে এসে হাজির হয়নাই। এদের ধারণা প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের সময় থেকেই চর্চায় ছিল। আর প্রতি দশকে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং বিষয়টি ধীরে ধীরে বেগ পেতে থাকে।
শুরুটা হয়েছিলো ১৯৪০ এর দশকে অ্যালেন ট্যুরিং ‘’টুরিং টেস্ট” এর প্রস্তাব এর মাধ্যমে। যা মেশিন বুদ্ধিমত্তার একটি অন্যতম পরীক্ষা ছিল। তার ঠিক এক দশক পরে, ১৯৫০ এর দশকে “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” শব্দটি প্রথমবারের মতো সবার সামনে এসেছিল। তার আগে হয়তো কেউ জানতই না যে কৃত্রিম বুদ্ধিমতা বলেও কিছু পৃথিবীতে আছে।
পরবর্তীতে ১৯৬০ এর দশকে গবেষকরা নিয়ম- ভিত্তিক AI এবং প্লেয়িং অ্যালগরিদম তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখিয়েছিলেন। এবং শেষ ম্যাচ ১৯৮০ এ দশকে মেশিন লার্নিংয়ের অ্যারেগরিদম এর খেলা শুরু হয়। সেখান থেকে আজ পর্যন্ত এই অ্যালগরিদম উন্নতি করতেই আছে।
দর্শক এবার হয়তা আপনাকে যে ঘটনা গুলি বলতে চলেছি তা হয়তো আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। হ্যাঁ আপনি জানলে অবাক হবেন যে বিগত কয়েক বছরে এমন কিছু ঘটনা ঘটে গেছে যেখানে মানুষের নিজ হাতে তৈরি কম্পিউটার সেই মানুষকেই বুদ্ধির খেলায় পরাজিত করেছে। হ্যাঁ সত্যিই। চলুন এবার তাহলে দেখা নেওয়া যাক সাক্ষী করা সেরকম কিছু ঘটনা বলি:
১৯৯৭ সালের সেই দিনটি ছিলো একটি অন্যান্য দিনের মতো সাধারণ দিন। কিন্তু সেদিনেই ঘটে যায় এক অঘটন। Deep Blue, IBM-এর একটি কম্পিউটার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দাবা খেলোয়াড় গ্যারি কাসপারভকে পরাজিত করে।
এখানেই শেষ নয়, ২০০৫ সালে, DARPA আয়োজিত চালকবিহীন গাড়ির জন্য একটি বড় প্রতিযোগিতা হয়েছিল। রোবটিক গাড়িগুলিকে সেখানে একটি কঠিন ২১২ কিমি অফ-রোড ট্র্যাকে চালক ছাড়া চালানো হয়েছিল। আর সেই রেস এর 23টি শীর্ষ গাড়ির মধ্যে, একটি বাদে বাকি সবগুলিই আগের বছরের রেসের সেরা গাড়ির চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছিল। কিসম পাঁচটি গাড়ি সম্পূর্ণরুপে রেসটি সফলভাবে শেষ করেছিলো।
২০১১ সালে ঘটে আরেকটি মজার ঘটনা। একটি বড় ইভেন্ট হয়েছিল যেখানে Watson নামে IBM-এর সুপার কম্পিউটার যা প্রাকৃতিক ভাষা বোঝার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিলো সেটি একটি টিভি কুইজ শো “Jeopardy!”-তে শীর্ষ মানব চ্যাম্পিয়ন কেন জেনিংস এবং ব্র্যাড রাটার এর বিরুদ্ধে তাদের কে রীতিমতো নাকানিচুবানি খাওয়ায়ে ছিল তার দ্রুত ও নির্ভুল উত্তর প্রদানের মাধ্যমে।
২০১৬ সাল ছিলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে যুগান্তকারী একটি বছর। AlphaGo, Google DeepMind দ্বারা তৈরি একটি প্রোগ্রাম। সেটি প্রাচীন চীনা বোর্ড গেম গো-তে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজনকে পরাজিত করে পুরো বিশ্বে সারা ফেলে ছিল।
AlphaGo-এর বিজয় মেশিন লার্নিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পক্ষে জটিল কাজ আয়ত্ত করার জন্য যে গভীর নিউরাল নেটওয়ার্কের শক্তি আছে তা সবাইকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল । এটি AI এর বিকাশের একটি বড় মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত কর হয়। এবং প্রযুক্তি এবং মানব বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যত সম্পর্কে অনেক আশঙ্কাময় প্রশ্ন উত্থাপন করে।
আরে এই তো কিছুদিন আগেই ২০২০ সালে, OpenAI GPT-3 আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং এর ওপর যে ধারণা ছিল তা পুরাপুরি এক চুটকিতে পাল্টে দিল । সবকিছু যেন এক মুহূর্তে ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে এরকম মনে হলো।
GPT-3 কে দেখলে মনে হওয়া শুরু হলো এ যেন সবকিছু জানে। মানুষের মতো পাঠ্য বই বা গল্প তৈরি করার অসাধারণ ক্ষমতাও সে দেখিয়ে দিলো। যার দরুন AI সম্প্রদায়ে পুরো ভাবমূর্তি পাল্টে গেল।
কি পারে না এই Chat-GPT? প্রবন্ধ লেখা থেকে শুরু করে , কোড তৈরি করা, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এবং এমনকি কবিতা তৈরি সহ বিভিন্ন ভাষার কাজ সম্পাদন করে বিশ্বের জ্ঞান পারায় কেমন জানি এক অন্ধকারের ছায়া বয়ে আনলো।
মনে হলো এ যেন মানুষের সৃজনশীলতার বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। হয়তোবা মানুষের জায়গায় রোবট রাস্তায় চলাচল করবে এবং মানুষকে বানাবে তাদের স্লেভ।
যদিও পরবর্তীতে আমরা GPT-3 অনেকগুলি কমতি বের করে ফেললাম। যেমন পক্ষপাতিত্ব করা, ভুল তথ্য প্রদান এবং তার সম্ভাব্য অপব্যবহারের বিষয়গুলি। যার ফলে AI এর প্রতি আমাদের একটি নৈতিক উদ্বেগের জন্ম দিলো।
পরবর্তীতে অবশ্য কন্ট্রোভার্সি এড়ানোর জন্য OpenAI তাদের এই মডেলটিতে অ্যাক্সেস সীমিত করে। এবং এর দায়িত্বশীল ব্যবহারের জন্য নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করে। যার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি প্রশমিত করা শুরু হয়।
কিন্তু, আমরা একটা জিনিস কোনভাবেই এরিয়ে যেতে পারবো না যে বর্তমানে GPT-3 প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রতিনিধিত্ব করছে।
তার পাশাপাশি এটি যোগাযোগ এবং সৃজনশীলতা থেকে শুরু করে স্বয়ংক্রিয়তা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনের যে পারদর্শীতা রেয়েছে তা সমাজের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করছে।
আজকাল বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং এর ব্যবহার ব্যবহার আমাদের জীবনে জীবিকার সাথে নির্বিঘ্নে মিশে যাচ্ছে।
এইতো চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়, ওষুধ আবিষ্কার, ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা ইত্যাদি তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং প্রতিনিয়তই কোন না কোন ভাবে তাদের ছাপ রেখে যাচ্ছে।
উদাহরণ হিসেবে আমরা IBM Watson এর কথা কিভাবে ভুলে যাবো? যা ক্যান্সার রোগীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আবার, PayPal লেনদেন এর সুস্থতা বজায় রাখবার জন্য মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে জালিয়াতি সনাক্ত করছে। এছাড়াও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বাজার বিশ্লেষণ, ব্যক্তিগত আর্থিক পরামর্শ নেওয়া, কোন ক্ষেত্রে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্পর্শ থেকে দূরে আছি?
Amazon এর মত বিজনেস জায়েন্ট উৎপাদন এর দক্ষতা উন্নত করতে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করছে।
পরিবহন ক্ষেত্রেও বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং এর আধিপত্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। Waymo যা একটি অটো পাইলট সমৃদ্ধ গাড়ি, সেটি মানুষ এর কন্ট্রোল ছাড়াই চলবার জন্য AI ব্যবহার করছে। যা ভবিষ্যতে আমাদের হয়তো কষ্ট করে গাড়ি চালানো থেকে পরিত্রাণ দিবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং মূলত সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে। একটু খেয়াল করলে দেখতে পারবেন Khan Academy কিভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের ইন্ডিভিজুয়ালি গাইড করা বা শিক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা প্রদান করতে AI ব্যবহার কত ক্রিয়েটিভ ভাবে করছে।
এখন যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং আমাদের জীবনে ওতপ্রতভাবে জড়িয়েই গেছে বা যাচ্ছে। সেহতু এর প্রভাব ও আমাদের জীবনে লক্ষ্য করা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। তো ঠিক কি কি প্রভাব তারা আমাদের জীবনে ফেলছে বা ফেলতে চলেছে তার সম্পর্ক একটু জেনে নেওয়া যাক?
ফ্যাক্টরিগুলোকে এখন আমারা আরো বেশি পরিমাণে উৎপাদন করতে দেখছি । কারন তারা সাধারণত বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং এর দরুন স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের পরিবর্তে রোবট দ্বারা নির্ভুল ও অক্লান্ত ভাবে উৎপাদন চালতে পারছে।
জীবন জীবিকায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মেশিন লার্নিং এর যেমন ভালো প্রভাব রয়েছে ঠিক সেরকমই মেশিন লার্নিং মিডিওকর লেভেলের স্কিল ধারীদের যেকোনো সময় প্রতিস্থাপন করে ফেলতে পারে।
যার প্রভাব চাকরির বাজারে এক অনন্য পরিবর্তন পরিবর্তন। সম্ভবত AI এবং মেশিন লার্নিং অনেকিছুই পরিবর্তন আনতে চলেছে।
যেমন ধরুন অনেক একটি ইমেইল করতে বা এক দপ্তর থেকে আরেক দপ্তর এ কোন একটি পত্র প্রেরণ করতে বর্তমানে যে মানুষটিকে চাকরিতে ঢোকানো হচ্ছে আগামীতে তার এই কাজটি হয়তোবা AI সাধন করবে।
অনেকাংশে মোটামুটি ধরনের লেখকদের অথবা কোডারদের কিংবা গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের চাকরি ও এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গিলে ফেলতে চলেছে।
AI যেমন মানুষের জীবনে কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসছে সেরকম ভাবে তা অমাবস্যার মতো ঘন কালো রাতও বয়ে নিয়ে আসতে পারে। সাম্প্রতিক Deep Fake AI তার একটি উদাহরণ। যেখানে যেকোন মানুষের ছবিকে নগ্ন করতে দেখা গিয়েছে সেই AI টিকে। এতে করে সমাজে অশ্লীলতা এবং ক্রাইম তো বারছেই। তার ওপরে যুব সমাজ কে খুব সহজেই হুমকির পথে নিয়ে যাচ্ছে এই ধরনের AI অ্যাপস গুলি।
সুতরাং আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদেরকে নীতি-নৈতিকতার চর্চা করতে হবে। এবং এই ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
সব শেষে বলা বাহুল্য যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং আমাদের বিশ্বকে খুব দ্রুতই পরিবর্তন করছে। এরা আমাদের জীবন ও জীবিকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং আমাদের জীবনকে আরও উন্নত করার সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে।
সুতারাং, সেই সাথে আমরা যদি একটু সতর্কতার সাথে এই আশীর্বাদ টিকে সদুপায়ে ব্যবহার করতে পারি তবে এর থেকে আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এবং মানব সভ্যতা অনেক বেশিই কল্যাণকর ফলাফল বের করে নিয়ে আসতে পারবে বলে আশা রাখছি।
প্রিয় দর্শক বন্ধুরা। জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোচনায় আজকে এখানেই ইতি টানতে হচ্ছে। তবে আজই শেষ নয়। আবার আসব ফিরে। ততদিন সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন এবং মোস্ট ইম্পোর্টেন্টলি প্রতিনিয়ত বিজ্ঞানের এইরকম চমকপ্রদ ইনফরমেশন গুলো দেখতে চোখ রাখুন আমাদের চ্যানেলে। ভিডিওটি দেখাবর জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ!